IQNA

সন্তান প্রতিপালনে পিতা - মাতার ধৈর্যের গুরুত্ব 

17:13 - April 07, 2021
সংবাদ: 2612571
তেহরান (ইকনা): সন্তান প্রতিপালন অর্থাৎ সন্তানকে সুষ্ঠু ভাবে গড়ে তোলার ( তরবিয়ত ) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর বা উপাদান ( কারণ ) হচ্ছে পিতা-মাতার সহ্য শক্তি , ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা ( কষ্ট ও সমস্যা সহ্য করার শক্তি ও ক্ষমতা ) । যদি পিতা মাতা ভালো কাজ করে সন্তানকে বলে যে আমি এ কাজটা পছন্দ করি তাই তা করেছি বা করি। 
আমি নামায পড়া পছন্দ করি তাই নামায পড়ি । সন্তানের তরবিয়তের ( গঠন ও প্রতিপালন ) উপর পিতা-মাতার এ ধরনের কথা বলার নেতিবাচক প্রভাব (আছর) হচ্ছে যে সন্তান তখন চিন্তা করবে যে বাবা মা যা পছন্দ করে ঠিক সেটাই করে । অতএব আমি যা পছন্দ করি ঠিক সেটাই করতে চাই। বাচ্চারা (সন্তানরা) ১২ - ১৩ বছর বয়স পর্যন্ত পিতা-মাতার অনুসরন ও অনুকরণ করে এবং পিতা-মাতার মতো হতে পছন্দ করে। তাই দেখা যায় যে নামাযী পিতা-মাতার অনুকরণে সন্তানরা নামায পড়ছে রোযা রাখছে। এর দ্বারা যেন আমরা প্রতারিত না হই যে আমার শিশু ছেলে মেয়ে নামাযী হয়ে গেছে। কারণ এটা চিরস্থায়ী নয়। ১২-১৩ বছর বয়সের পর তারা ( ছেলে মেয়েরা ) পরিবেশ পরিস্থিতি ও সঙ্গ দোষের কারণে  নামায ছেড়ে দিতে পারে। 
 
তাই মায়েদের উচিত রাগন্বিত হয়ে গেলে সন্তানের সামনে গালি না দেওয়া অর্থাৎ মুখে যা আসে তা না বলা। মাত্র এই এক মিনিটের গালি গালাজই সন্তানকে ধ্বংস করে দেবে। তাই মায়েদেরকে - বাদেরকে ধৈর্য ধরতে হবে ধৈর্য্যচ্যুত হলে চলবে না। কারণ অধৈর্য হওয়ার অনুরূপ আর কোনো দোষ হয় না এবং ধৈর্য - সহিষ্ণুতা এবং বিপদাপদ , সমস্যা ও দু:খ - কষ্ট সহ্য করার শক্তি ও ক্ষমতার অনুরূপ কোনো গুণও নেই । 
 
বাচ্চারা অবুঝ নয় ; তারা সবকিছু বোঝে । অতএব বাবা-মাদেরকে  অনেক সাবধান ও সতর্ক হতে হবে । সন্তান যখন রাগান্বিত হওয়া সত্ত্বেও মায়ের ধৈর্য এবং মাকে হাসিমুখে বলতে শুনবে যে " না , কোনো অসুবিধা নেই । এটা কিছু না । " যখন বাবাকে  কঠোর হাড়ভাঙা পরিশ্রম ও খাটুনি করার পরেও আদব ও শিষ্টাচারের সাথে আচরণ করতে দেখবে তখন বয়স দশ বছর বেড়ে গেলে যে বুদ্ধি ও পরিপক্কতা আসে ঐ শিশু তাএক মুহূর্তের মধ্যে অর্জন করবে অর্থাৎ শিশু তার শিশুসুলভ  অপরিপক্বতা থেকে বের হয়ে আসবে এবং পরিপক্ক হবে । 
 
এক মনস্তত্ত্ববিদ তিনটি শিশুকে তিনটা মিষ্টি দিয়ে বললেন: আমি এক ঘন্টা পরে তোমাদের কাছে আসব । যে তার মিষ্টি খাবে না তাকে আমি পুরস্কার দেব। তিনি সেখান থেকে বের হয়ে গেলে সাথে সাথে একটি বাচ্চা মিষ্টি খেয়ে ফেলে। আরেকজন বার বার মিষ্টির দিকে তাকাচ্ছিল কিন্তু মিষ্টি খাচ্ছিল না। অবশেষে সে নিজেকে আর সামলাতে না পেরে মিষ্টিটা খেয়েই ফেললো। তৃতীয় বাচ্চাটা মিষ্টির দিকে না তাকিয়ে অন্য তাকাচ্ছিল এবং এ ভাবে সে শেষ পর্যন্ত আর মিষ্টি খায়। ঐ মনস্তাত্ত্বিক তাঁর এ পরীক্ষাটা ৯০০টা শিশুর উপর চালিয়েছিলেন এবং যারা ধৈর্য ধরে মিষ্টি খায় নি তাদের নাম এবং যারা ধৈর্য ধারন করতে না পেরে মিষ্টি খেয়ে ফেলেছিল তাদের নাম ও স্কুলের ঠিকানা লিখে রেখেছিলেন। এর ঠিক ১৫ বছর পর তিনি ঐ ৯০০ জনের খোঁজ নিয়ে দেখতে পান যে যারা ধৈর্য ধারণ করে মিষ্টি খায় নি এমনকি গড় পরতা মেধার অধিকারী হয়েও জীবনে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে এবং সাফল্য অর্জন করেছে। আর যারা ধৈর্য ধারন করতে পারে নি এবং মিষ্টি খেয়ে ফেলেছিল তারা হয় মাদকাসক্ত হয়ে গেছে বা জীবনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ বা নানা সমস্যা ও জটিলতায় জড়িয়ে গেছে  (এমনকি তাদের মধ্যে অনেকেই মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও)।
 
তাই , বাবা-মায়ের ধৈর্য ও কষ্ট সহিষ্ণুতা শিশু প্রতিপালন ও সঠিক তরবিয়তের এক অন্যতম মুখ্য কারণ ও ফ্যাক্টর । আর তাদের (পিতা-মাতা) ধৈর্যহীনতা ও অসহিষ্ণুতা সন্তানের সুষ্ঠু তরবিয়ত ও প্রতিপালনের পথে সবচেয়ে বড় বাধা ও অন্তরায় ।
(ওস্তাদ পানাহিয়ানের লেকচার অবলন্বনে )
অনুবাদ ও সংগ্রহ: হুজ্জাতুল ইসলাম মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান
২১ - ১- ১৪০০ ( ৭ - ৪ - ২০২১ )

 

captcha